বড়াইগ্রামে মানবতার ফেরিওয়ালা পল্লী চিকিৎসক কাওছার আলম — নিজের উপার্জনে গড়ে তুলেছেন বিনামূল্যে কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র।
মোঃ সুজন মাহমুদ, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি বারবেলা পত্রিকা।
নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ২নং বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড দিঘলকান্দি গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মোঃ কাওছার আলম আজ এলাকার আলোচিত ও প্রশংসিত এক নাম। পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক হলেও, মানবতার সেবায় নিবেদিত এই মানুষটি তার জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
মানুষের সেবার পাশাপাশি ধর্মীয় জ্ঞান বিস্তারে এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন কাওছার আলম। নিজের কবিরাজি চিকিৎসা থেকে প্রাপ্ত সামান্য উপার্জন তিনি ব্যয় করছেন এলাকার ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার কাজে। তার এই মহৎ উদ্যোগে দিঘলকান্দি গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে এক ইতিবাচক আলোড়ন।
এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পল্লী চিকিৎসক কাওছার আলম বলেন—
> “আমি দেখি অনেক ছেলে-মেয়ে দাখিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করেও ঠিকমতো কোরআন তেলাওয়াত করতে পারে না। তখন ভাবলাম, আমার কবিরাজি চিকিৎসা থেকে যে আয় হয়, তা যদি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করি, সেটাই হবে জীবনের প্রকৃত সাফল্য। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, এলাকার আগ্রহী ছেলে-মেয়েদের কোরআন শিক্ষার ব্যাবস্থা করি।”
তার এই মহৎ কাজ শুরু হয় মাত্র ৫-৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে, দিঘলকান্দি দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদে হাফেজ সাহেবের তত্ত্বাবধানে। বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ জনে। দিন দিন আরো শিক্ষার্থী যোগ দিচ্ছে এই কোরআন শিক্ষার উদ্যোগে।
গত শুক্রবার তিনি চারজন শিক্ষার্থীকে কোরআন হাতে দেওয়ার মাধ্যমে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। এরা হলেন—
১. মোঃ ইখলাছ আহম্মেদ (১২), পিতা: মোঃ ইমান আলী
২. মোঃ ইউসুফ আলী (১১), পিতা: মোঃ জয়নাল দর্জি
৩. মোছাঃ মরিয়ম খাতুন (১২), পিতা: মোঃ মবিদুল ইসলাম
৪. মোছাঃ শারমিন খাতুন (১১), পিতা: মোঃ আব্দুল করিম
তিনি জানান, বর্তমানে হাফেজ মোঃ রাকিবুল ইসলামের সহায়তায় এই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে কাওছার আলম বলেন—
> “আল্লাহ যদি তৌফিক দেন,এবং এলাকার মানুষ যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় আমি আমার এলাকায় একটি পূর্ণাঙ্গ হাফেজি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেন এলাকার সব ছেলে-মেয়ে এখানে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এবং এ কোরআন শিক্ষা আমি যতো দিন বেচে থাকি ততদিন চলমান থাকবে।”
এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সাধারণ মানুষ তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। স্থানীয়ভাবে অনেকেই এই উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
পল্লী চিকিৎসক কাওছার আলমের এই মানবিক উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সমাজে এক আলোকবর্তিকা। তার অনুপ্রেরণায় হয়তো আরো অনেকেই এগিয়ে আসবেন সমাজ ও ধর্মের কল্যাণে কাজ করতে।
> “আমি—সুজন মাহমুদ বলছি, সমাজের সচেতন, হৃদয়বান ও মানবিক মানুষদের প্রতি অনুরোধ—
> আসুন, এই স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগের পাশে দাঁড়াই।
> আমাদের ছোট সহযোগিতাই পারে, একটি মহৎ মানবিক প্রচেষ্টা আবারও সচল রাখতে।”
Leave a Reply